-inspired by the 'Love in the days of cholera' by Gabriel Garcia Marquez
গ্যাবো লিখেছিলেন এস্প্যানিওলে। বিশ্বশুদ্ধু লোকে পড়তে পারবে, এই বেয়াক্কেলে ভ্রান্তিতে ইংরেজীতে লেখেননি। কালজয়ী সাহিত্য যা লেখা হয়েছে অদ্যবধি, তার কিয়দংশই ইংরেজীতে। স্বাভাবিক। যে বিশ্বজনীন, তার শেকড় নেই, তাই প্রাণও নেই। অবশ্য প্রাণ আর নিষ্প্রাণ, জীব আর জড়ের মধ্যবর্তী যে ভাইরাস- তা-ই একবিংশ শতাব্দীতে বিবর্তনের শেষধাপ মানবজাতির ভিত ও জিন - উভয়ই কাঁপিয়ে দিয়েছে।
আপাতত করোনাভাইরাসের ভয়ে ইশকুলকলেজ সব বন্ধ। আন্তর্জাল ভরসা। করোনা অর্থে লাতিনে মুকুট, আকৃতিগত সাদৃশ্যের কারণে এই নাম। শেষের শুরু হয়েছিল চীনের উহান প্রদেশে, সেখানে তা মহামারীর আকার ধারণ করেছে এখন। আক্রান্ত হয়েছে প্রতিবেশী দেশ, এবং বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। যিনি প্রশাসনকে সাবধান করেছিলেন প্রথম, রাষ্ট্রের বিরোধিতার অভিযোগে মহান কম্যুনিস্ট সরকার তাকে দণ্ড দেয়। তারপর যা হয়, প্রকৃতির শাপ যায় না বিফলে, দাবানলের মত বিধ্বংসী সে রোগ ছড়িয়ে পড়ল। সেই ভদ্রলোক দেহ রাখলেন, মানুষ প্রতিবাদ করার বিক্ষোভ দেখাবার সুযোগ পেল না। একে সে দেশে গণতন্ত্র বা সোশ্যাল মিডিয়া সকলই বাজেয়াপ্ত, তায় তদ্দিনে শহর সিন্দুকবন্দী। ইতিমধ্যে পাখির ঠোঁটে পরাগের মত অভিযাত্রীদের হাঁচিকাশিতে ভেসে ভাইরাস পৌঁছে গেল সাগরপারে। ক্রান্তীয় দেশগুলির সুবিধা তাপমাত্রা, অসুবিধা জনসংখ্যা। এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ জায়গাতেই তা অতিমারী হয়ে ওঠেনি। ... ও তেমন কিছু নয়, দুদিনে সেরে যাবে - এই প্রাচীন রোমান দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেল ইতালিতে। সেখানে এখন জরুরী অবস্থা জারি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার। তারপরেও "বিয়িং আ রোমান হোয়েন য়ু আর ইন রোম"- বজায় আছে বহাল তবিয়তে। দলে দলে মানুষ ঝুলবারান্দায় বেরিয়ে এসে গান গাইছেন উদাত্ত কণ্ঠে, জানলার আলসেতে বসে গিটার কিংবা ম্যান্ডোলিন বাজাচ্ছেন, আর বাকিরা তা ক্যামেরায় কব্জা করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বাকি পৃথিবীর কাছে। জান যাক তবু প্রাণ যাবে না - এই উদ্দীপনাই রোমান নগরীকে আরো একবার চিনিয়ে দিয়ে গেল। দ্য কমেডি হ্যাজ অলওয়েজ বীন ডিভাইন দেয়ার।। ... আর আছে ভারতবর্ষ। সেখানে সরকারি দপ্তর আর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গবাদিদল -- এরা পরস্পরের থেকে পিঠ ফিরিয়েছে। প্রথমটি প্রশংসনীয় দ্রুতিতে সাবধানী পদক্ষেপ নিয়েছে, আর দ্বিতীয়টি এখনও পঞ্চগব্যের সাধনায় উচ্চৈঃস্বরে মগ্ন। দুষ্ট আমিষভোজীদের শাস্তি দিতেই মর্ত্যে করোনাভাইরাসের আগমন- এইসব অমৃতবাণী কান না পাতলেও চড়াম চড়াম শোনা যাচ্ছে। ধর্মান্ধতায় ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে আসরে নামলেন মৌলবীমশাই, আল্লাহ্পাক হইতে দোজখের মাঝখানে মুর্তাদগণের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের পাঁচওয়াক্ত জহরজাল বিছিয়ে দিলেন। হৈত্য সেলুকাস, এ উপমহাদ্যাশ কি বিসিত্তির সে আর কি কৈব! সেই খোদার বান্দারেই কীনা করুণাময় করোনাভাইরাসে ধরসে, হে হে ।
তারপর, এক অতলান্ত ও এক প্রশান্ত মহাজলধি অতিক্রম করে উদ্বাস্তু করোনা পৌঁছল পরিযায়ীদের স্বর্গ যুক্তরাষ্ট্রের পুবপশ্চিম বন্দরে। প্রথম বিশ্বের সুবিধে এই - চট করে মোকাবিলা করতে পারার পরিকাঠামো তাদের আছে। এদিকে বিশ্বউষ্ণায়ণকে চীনে গুজব বলে গুলতানি করে বেড়ানো রাষ্ট্রনায়ক ঘাবড়ে গিয়ে 'ভ্যাকসিন লাও, মেডিসিন লাও' বলে মুচ্ছো গেলেন। এখনো পর্যন্ত গর্ভপাত বিরোধী, লিঙ্গপরিচয় ও যৌনাকাঙ্খার সার্বভৌমত্ব বিরোধী (ও আরো কীসব স্বাভাবিক প্রবৃত্তিবিরোধী) গোঁড়া ক্যাথলিকদের প্রকাশ্যে কিছু বলতে শোনা যায়নি - তার আগেই কাছারিপাড়ায় তালা পড়েছে। জাদুঘর থেকে ক্রীড়াঙ্গণ - সকল আনন্দোৎসব মুলতুবি। হাটবাজারে টয়লেট পেপার আর স্যানিটাইজারের জন্য যে হাঙ্গামা হচ্ছে, তাতে দুর্ভিক্ষের দেশে অনাহারী মানুষের চাল বা গমের জন্য হাহাকারের কথা মনে পড়ে যায়। এ উপত্যকায় হরেকরকম কেক ও রুটি - উভয়ই সুলভ যদিও। খাবারের চেয়েও শুদ্ধিকরণের প্রতি এই যে পক্ষপাত, এইসব দেখে অনেক পাকা কথা মাথায় আসে। স্বাচ্ছন্দ্য মানুষকে মৌলিক চাহিদা থেকে দূরে সরিয়ে দেয় হয়তো। বা চাহিদা একই থাকে, তার বোধটুকু পাল্টে যায়। এর পাশাপাশি অনেক রেস্তোরাঁ এগিয়ে আসছেন নিখরচায় বাচ্চাদের খাবারের ব্যবস্থাপনায়। গৃহহীনদের সুরক্ষার কথা ভাবছেন কেউ কেউ। আর কিছু ট্যাঁশ, যারা এমনিতেই তুলতুলে আতুপুতু বেঁচেমরে থাকে, তারা চরম আতঙ্কে লোটাকম্বল পাকড়ে পর্দানশীন। সচেতন ও অতিসচেতনের ফারাক বুঝে ফেলা এই নোটাপন্থী, প্রশ্নহীন ছুঁড়ে ফেলা ও আগলে রাখার যুযুধান চৌকাঠে বসে সংবেদনশীলতার পিদিম জ্বেলে এই খাজা নকশাখানি বোনে ঘাড়পিঠ গুঁজে। জুলভার্ণের সাবমেরিন আর এসিমভের গ্রহান্তরযাত্রার মত এবারেও খুঁড়ে আনা হচ্ছে অতিপ্রাকৃত ভবিষ্যদ্বাণী, যার সঙ্গে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার তুলনা বিষম তর্কসাপেক্ষ। ইতিহাস চ প্রজ্ঞানং চ রূপকথা চ কল্পবিজ্ঞান, চক্রবৎ পরিবর্তন্তে চক্রবৎ পরিবর্তন্তে।।
গ্যাবো লিখেছিলেন এস্প্যানিওলে। বিশ্বশুদ্ধু লোকে পড়তে পারবে, এই বেয়াক্কেলে ভ্রান্তিতে ইংরেজীতে লেখেননি। কালজয়ী সাহিত্য যা লেখা হয়েছে অদ্যবধি, তার কিয়দংশই ইংরেজীতে। স্বাভাবিক। যে বিশ্বজনীন, তার শেকড় নেই, তাই প্রাণও নেই। অবশ্য প্রাণ আর নিষ্প্রাণ, জীব আর জড়ের মধ্যবর্তী যে ভাইরাস- তা-ই একবিংশ শতাব্দীতে বিবর্তনের শেষধাপ মানবজাতির ভিত ও জিন - উভয়ই কাঁপিয়ে দিয়েছে।
আপাতত করোনাভাইরাসের ভয়ে ইশকুলকলেজ সব বন্ধ। আন্তর্জাল ভরসা। করোনা অর্থে লাতিনে মুকুট, আকৃতিগত সাদৃশ্যের কারণে এই নাম। শেষের শুরু হয়েছিল চীনের উহান প্রদেশে, সেখানে তা মহামারীর আকার ধারণ করেছে এখন। আক্রান্ত হয়েছে প্রতিবেশী দেশ, এবং বিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত। যিনি প্রশাসনকে সাবধান করেছিলেন প্রথম, রাষ্ট্রের বিরোধিতার অভিযোগে মহান কম্যুনিস্ট সরকার তাকে দণ্ড দেয়। তারপর যা হয়, প্রকৃতির শাপ যায় না বিফলে, দাবানলের মত বিধ্বংসী সে রোগ ছড়িয়ে পড়ল। সেই ভদ্রলোক দেহ রাখলেন, মানুষ প্রতিবাদ করার বিক্ষোভ দেখাবার সুযোগ পেল না। একে সে দেশে গণতন্ত্র বা সোশ্যাল মিডিয়া সকলই বাজেয়াপ্ত, তায় তদ্দিনে শহর সিন্দুকবন্দী। ইতিমধ্যে পাখির ঠোঁটে পরাগের মত অভিযাত্রীদের হাঁচিকাশিতে ভেসে ভাইরাস পৌঁছে গেল সাগরপারে। ক্রান্তীয় দেশগুলির সুবিধা তাপমাত্রা, অসুবিধা জনসংখ্যা। এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ জায়গাতেই তা অতিমারী হয়ে ওঠেনি। ... ও তেমন কিছু নয়, দুদিনে সেরে যাবে - এই প্রাচীন রোমান দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেল ইতালিতে। সেখানে এখন জরুরী অবস্থা জারি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার। তারপরেও "বিয়িং আ রোমান হোয়েন য়ু আর ইন রোম"- বজায় আছে বহাল তবিয়তে। দলে দলে মানুষ ঝুলবারান্দায় বেরিয়ে এসে গান গাইছেন উদাত্ত কণ্ঠে, জানলার আলসেতে বসে গিটার কিংবা ম্যান্ডোলিন বাজাচ্ছেন, আর বাকিরা তা ক্যামেরায় কব্জা করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বাকি পৃথিবীর কাছে। জান যাক তবু প্রাণ যাবে না - এই উদ্দীপনাই রোমান নগরীকে আরো একবার চিনিয়ে দিয়ে গেল। দ্য কমেডি হ্যাজ অলওয়েজ বীন ডিভাইন দেয়ার।। ... আর আছে ভারতবর্ষ। সেখানে সরকারি দপ্তর আর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক গবাদিদল -- এরা পরস্পরের থেকে পিঠ ফিরিয়েছে। প্রথমটি প্রশংসনীয় দ্রুতিতে সাবধানী পদক্ষেপ নিয়েছে, আর দ্বিতীয়টি এখনও পঞ্চগব্যের সাধনায় উচ্চৈঃস্বরে মগ্ন। দুষ্ট আমিষভোজীদের শাস্তি দিতেই মর্ত্যে করোনাভাইরাসের আগমন- এইসব অমৃতবাণী কান না পাতলেও চড়াম চড়াম শোনা যাচ্ছে। ধর্মান্ধতায় ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে আসরে নামলেন মৌলবীমশাই, আল্লাহ্পাক হইতে দোজখের মাঝখানে মুর্তাদগণের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের পাঁচওয়াক্ত জহরজাল বিছিয়ে দিলেন। হৈত্য সেলুকাস, এ উপমহাদ্যাশ কি বিসিত্তির সে আর কি কৈব! সেই খোদার বান্দারেই কীনা করুণাময় করোনাভাইরাসে ধরসে, হে হে ।
তারপর, এক অতলান্ত ও এক প্রশান্ত মহাজলধি অতিক্রম করে উদ্বাস্তু করোনা পৌঁছল পরিযায়ীদের স্বর্গ যুক্তরাষ্ট্রের পুবপশ্চিম বন্দরে। প্রথম বিশ্বের সুবিধে এই - চট করে মোকাবিলা করতে পারার পরিকাঠামো তাদের আছে। এদিকে বিশ্বউষ্ণায়ণকে চীনে গুজব বলে গুলতানি করে বেড়ানো রাষ্ট্রনায়ক ঘাবড়ে গিয়ে 'ভ্যাকসিন লাও, মেডিসিন লাও' বলে মুচ্ছো গেলেন। এখনো পর্যন্ত গর্ভপাত বিরোধী, লিঙ্গপরিচয় ও যৌনাকাঙ্খার সার্বভৌমত্ব বিরোধী (ও আরো কীসব স্বাভাবিক প্রবৃত্তিবিরোধী) গোঁড়া ক্যাথলিকদের প্রকাশ্যে কিছু বলতে শোনা যায়নি - তার আগেই কাছারিপাড়ায় তালা পড়েছে। জাদুঘর থেকে ক্রীড়াঙ্গণ - সকল আনন্দোৎসব মুলতুবি। হাটবাজারে টয়লেট পেপার আর স্যানিটাইজারের জন্য যে হাঙ্গামা হচ্ছে, তাতে দুর্ভিক্ষের দেশে অনাহারী মানুষের চাল বা গমের জন্য হাহাকারের কথা মনে পড়ে যায়। এ উপত্যকায় হরেকরকম কেক ও রুটি - উভয়ই সুলভ যদিও। খাবারের চেয়েও শুদ্ধিকরণের প্রতি এই যে পক্ষপাত, এইসব দেখে অনেক পাকা কথা মাথায় আসে। স্বাচ্ছন্দ্য মানুষকে মৌলিক চাহিদা থেকে দূরে সরিয়ে দেয় হয়তো। বা চাহিদা একই থাকে, তার বোধটুকু পাল্টে যায়। এর পাশাপাশি অনেক রেস্তোরাঁ এগিয়ে আসছেন নিখরচায় বাচ্চাদের খাবারের ব্যবস্থাপনায়। গৃহহীনদের সুরক্ষার কথা ভাবছেন কেউ কেউ। আর কিছু ট্যাঁশ, যারা এমনিতেই তুলতুলে আতুপুতু বেঁচেমরে থাকে, তারা চরম আতঙ্কে লোটাকম্বল পাকড়ে পর্দানশীন। সচেতন ও অতিসচেতনের ফারাক বুঝে ফেলা এই নোটাপন্থী, প্রশ্নহীন ছুঁড়ে ফেলা ও আগলে রাখার যুযুধান চৌকাঠে বসে সংবেদনশীলতার পিদিম জ্বেলে এই খাজা নকশাখানি বোনে ঘাড়পিঠ গুঁজে। জুলভার্ণের সাবমেরিন আর এসিমভের গ্রহান্তরযাত্রার মত এবারেও খুঁড়ে আনা হচ্ছে অতিপ্রাকৃত ভবিষ্যদ্বাণী, যার সঙ্গে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার তুলনা বিষম তর্কসাপেক্ষ। ইতিহাস চ প্রজ্ঞানং চ রূপকথা চ কল্পবিজ্ঞান, চক্রবৎ পরিবর্তন্তে চক্রবৎ পরিবর্তন্তে।।
Comments
Post a Comment